Kherua mosque Bogua

খেরুরা মসজিদ - শেরপুর, বগুড়া

Kherua mosque, Bogua
ভ্রমণ করে আসলাম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খেরুয়া মসজিদ (Kherua Mosque) – শেরপুর, বগুড়া থেকে। বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার খন্দকার টোলা এলাকায় এই খেরুয়া মসজিদ অবস্থিত।

খেরুরা মসজিদ 

প্রায় ৪৩৭ বছর পুরনো খেরুয়া মসজিদ ভ্রমণের শুরুতে প্রথমে আমরা খেরুয়া মসজিদ সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু তথ্য জেনে নিব।

খেরুয়া মসজিদ ভ্রমণ তথ্য

ভ্রমণ স্থানখেরুয়া মসজিদ
ধরনপ্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
অবস্থানখন্দকার টোলা, শেরপুর, বগুড়া
স্থাপিত১৫৮২ইং
স্থাপন করেনমির্জা মুরাদ খান কাকশাল
গম্বুজ সংখ্যা৩টি
পদার্থচুন, সুরকি, কৃষ্ণ পাথর
মুসল্লি ধারণ ক্ষমতাপ্রায় ৯০ জন
আয়তন৫৯ শতক
মালিকানাবাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
ঢাকা থেকে দূরত্ব১৬৬ কিলোমিটার (প্রায়)
বগুড়া থেকে দূরত্ব২৮ কিলোমিটার (প্রায়)

সময়সূচী

খেরুয়া মসজিদ সপ্তাহিক খোলা থাকার সময় সূচী।
শনিবার০৬:০০-৬:০০
রবিবার০৬:০০-৬:০০
সোমবার০৬:০০-৬:০০
মঙ্গলবার০৬:০০-৬:০০
বুধবার০৬:০০-৬:০০
বৃহস্পতিবার০৬:০০-৬:০০
শুক্রবার০৬:০০-৮:০০

ইতিহাস

আজ থেকে প্রায় ৪৩৭ বছর পূর্বে মোগল পূর্ব সুলতানি আমলের স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে মোগল স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ খান কাকশাল ১৫৮২ সালে বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার খন্দকার টোলা এলাকায় বিখ্যাত ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট খেরুয়া মসজিদ নির্মান করেন।
তবে, মসজিদ নির্মাণ কারীর নাম নিয়ে একটু দ্বিমত আছে তা সরজমিনে ভ্রমণে গিয়ে জানতে পারলাম। অনেকে বলেন, খেরুয়া মসজিদ টি নির্মাণ করেছেন আব্দুস সামাদ ফকির।
কিন্তু, মসজিদে ঢুকার গেইটের সামনের দেয়ালে উৎকীর্ণ শিলালিপি তে গোল গোল করে লিখা রয়েছে মসজিদ নির্মাতা মির্জা মুরাদ খান কাকশাল। আমরা এটাই সঠিক বলে ধরে নিচ্ছি।
খেরুয়া মসজিদ এর বিশেষত্ব হচ্ছে, মসজিদ এর উপরে সম মাপের ৩টি বড় গম্বুজ রয়েছে।

আয়তন

খেরুয়া মসজিদ এর আয়তন ৫৯ শতক। অর্থাৎ সম্পূর্ণ মসজিদ এবং চারপাশে দেয়াল দিয়ে পরিবেষ্টি জমির পরিমাণ ৫৯ শতক।
মসজিদ এর ভিতরে ঢুকার জন্য দক্ষিন দিকে একটি ছোট লোহার গেইট রয়েছে। তার পাশেই একটি উৎকীর্ণ শিলালিপি বা সাইনবোর্ড রয়েছে। যেখানে খেরুয়া মসজিদ সম্পর্কে বাংলা এবং ইংরেজিতে সংক্ষিপ্ত বর্বণা দেয়া রয়েছে।
গেইট দিয়ে ঢুকার পর হাতের বা’দিকে মসজিদ টি দেখতে পাবেন। মসজিদ এর সামনে রয়েছে একটি বেশ বড় খালি মাঠ। মাঠের একপাশে আব্দুস সামাদ ফকির এর কবর। আর মসজিদ এর একেবারে উত্তর পশ্চিম দিকে রয়েছে ওযুখানা।

অবকাঠামো

খেরুয়া মসজিদটি ১.৮১ মিটার চওড়া। মসজিদ এর দৈর্ঘ্য ১৭.২৭ মিটার এবং প্রস্থ ৭.৪২ মিটার।
মসজিদ এর পূর্ব দিকের দেয়ালে ৩টি এবং উত্তর-দক্ষিণ দিকের দেয়ালে ১টি করে মোট ৫ খিলানযুক্ত দরজা রয়েছে। সাথে পশ্চিম দিকের দেয়ালে রয়েছে তিনটি কারুকার্যখচিত মেহরাব।
কারুকার্যখচিত মেহরাব

৩ গম্বুজ মসজিদ

৩ গম্বুজ বিশিষ্ট খেরুয়া মসজিদ টি সম্পূর্ণ তৈরি হয়েছে চুন, সুরকি এবং বৃহদাকার কৃষ্ণ পাথর দিয়ে। এখানে কোন রড, সিমেন্ট, বালি ব্যাবহার করা হয় নি। তবে ১৫৮২ সালে নির্মানের পর থেকে এখন পর্যন্ত খেরুয়া মসজিদ টি বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে।
খেরুয়া মসজিদের উপরে বেশ বড় বড় ৩টি গম্বুজ রয়েছে। ৩টি গম্বুজের ফলে পুরো মসজিদ এর ছাদটি গম্বুজ দিয়ে ঢেকে রয়েছে 
মসজিদ এর চার পাশে ৪টি পিলার রয়েছে। পিলারগুলো কারুকার্য করা।
পিলার 
এছাড়া পশ্চিম দিক বাদে বাকি সব দিকেই মসজিদে ঢোকার দরজা রয়েছে। তবে, বর্তমানে শুধুমাত্র পূর্বদিকে একটি গেইট খোলা রয়েছে এবং এটিই ব্যাবহার করা হয়।
মসজিদ টি দেখতে বাগের হাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ এর মত! 

খেরুয়া মসজিদ এর ভিতরে ঢুকেই যা দেখলাম

৩ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি ১৫৮২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ঠায় দাড়িয়ে রয়েছে। দেখে মনে হয় এখনও তরতাজা। বেশি দিন হয়নি বানানো হয়েছে তাকে।
মসজিদ এর চারপাশে উচু দেয়ালের বেষ্টনী রয়েছে। দেয়ালের চারপাশে রয়েছে নানা ফুল গাছ, ফল গাছ ও কাঠ গাছের সারি।
মসজিদ এর সামনে একটি কবর। উত্তর দিকে একটি ওয়ুখানা রয়েছে। এই মসজিদে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়। সাথে শুক্রবারের জুমার নামাজও আদায় করা হয়। একসাথে এই মসজিদে প্রায় ৯০ জন মুসল্লি নামাজ পরতে পারেন।
মসজিদ এর সামনের জায়গাটি ঈদগাহ হিসেবে ব্যাবহার করা হয়।
ঈদগাহ মাঠ

বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর

বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর যতগুলো প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন রক্ষণাবেক্ষণ করেন তার ভিতরে খেরুয়া মসজিদ একটি। মসজিদ এর দেখাশোনা করা থেকে শুরু করে সংস্কার কাজ সহ যাবতীয় কাজ বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর করে থাকে।

খেরুয়া মসজিদ ভ্রমণ গাইড

ঢাকা থেকে খেরুয়া মসজিদ এর দূরত্ব প্রায় ১৬৬ কিলোমিটার। বগুড়া থেকে দূরত্ব প্রায় ২৮ কিলোমিটার। আর, শেরপুর উপজেলা সদর থেকে দূরত্ব প্রায় ১ কিলোমিটার।
আপনি শেরপুর সদর উপজেলা থেকে সিএনজি, রিকশা অথবা ভ্যানে করে যেতে পারবেন। মনে রাখবেন গ্রামের নামঃ খন্দকার টোলা।

ঢাকা থেকে ট্রেন ভ্রমণ

ঢাকা থেকে ২টি ট্রেন সার্ভিস রয়েছে। ট্রেন ২টি হলঃ লালমনি এবং রংপুর এক্সপ্রেস। ২টি ট্রেনই বগুড়া হয়ে যাতায়াত করে।
ঢাকা থেকে প্রতিদিন সকাল ৯টায় রংপুর এক্সপ্রেস এবং রাত ১০ টা ১০ মিনিটে লালমনি এক্সপ্রেস কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে যায়।
তবে, রংপুর এবং লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন যথাক্রমে রবিবার এবং শুক্রবার বন্ধ থাকে।


courtesy : Arif bhai

#kherua_mosjid_bogura


Comments

Popular posts from this blog

মনোবিজ্ঞানঃ নিজের সম্পর্কে আমরা কতটা জানি!

মানব মন: হাজার রহস্যের এক ধুম্রজাল!